আন্তর্জাতিক 

Pegasus: ফোনে আড়ি পাততে ইসরাইলের কাছ থেকে পেগাসাস কিনেছিল মোদি সরকার, নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ঘিরে ভারতীয় রাজনীতিতে চাঞ্চল্য

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : গতবছর সংসদের অধিবেশন চালু হওয়ার এক দিন আগে পেগাসাস ইস্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সমগ্র দেশ। সেই সময় মোদি সরকারকে পেগাসাস ইস্যু নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি। তবে বিরোধীদের চাপের মুখে এবং সুপ্রিম কোর্ট নিজে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছে। সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসার আগে আমেরিকার এক সংবাদপত্রের সংবাদকে ঘিরে আবারো ভারতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠতে চলেছে বলে সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।

আমেরিকার প্রখ্যাত সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে 2017 সালে ইসরাইল থেকে ফোনে আড়িপাতার জন্য স্পাইওয়্যার পেগাসাস কিনেছিল ভারত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতীয় রাজনীতি ফের উত্তাল হয়ে উঠল বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সুপ্রিমকোর্ট জানিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীদের কাজকর্মের গতিবিধি জানার জন্য অবশ্যই ফোন ট্যাপ করা যেতেই পারে কিন্তু তার মানে এটা নয় সাধারণ নাগরিকের ফোন ট্যাপ করতে হবে। দেশের সাধারণ নাগরিক এবং রাজনীতিবিদদের কথোপকথন ট্যাপ করা অনৈতিক এবং সংবিধান বিরোধী বলে সুপ্রিমকোর্ট জানিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ঘিরে ভারতীয় রাজনীতি আবারো উত্তাল হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। বিশেষ করে পাঁচ রাজ্যের ভোটের মুখে এই খবর সামনে আসার পর বিজেপি দল যে অস্বস্তিতে পড়েছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

Advertisement

‘দ্য ব্যাটল ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’স মোস্ট পাওয়ারফুল সাইবারওয়েপন’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে মোদীর সফরের সময়ই ইজরায়েল থেকে প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা নজরদারি সরঞ্জাম কিনতে ২০০ কোটি ডলারের (প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকার) দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়েছিল। ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি সেই ‘প্রতিরক্ষা চুক্তির’ তালিকায় অন্যতম ছিল ফোনে আড়ি পাতার স্পাইঅয়্যার পেগাসাস। এই পেগাসাস ব্যবহার করেই কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী নেতানেত্রীদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে ২০২০ সালে।

ইজারায়েলের এনএসও নামে সংস্থা প্রায় এক দশক ধরে আড়ি পাতার স্পাইঅয়্যার বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা এবং আইন প্রণয়ণকারী সংস্থাকে বিক্রি করে আসছে বলেও ‘নিউ ইয়র্ক টাইমসের’-এর ওই প্রতিবেদনের দাবি। ওই স্পাইঅয়্যারের সাহায্যে অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোনে কথোপকথনের উপর নজরদারি চালানো সম্ভব। মোদীর সেই সফরের কয়েক মাস পরেই ভারতে এসেছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ঘটনাচক্রে, এর কিছু দিন পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদের ভোটে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল মোদী সরকার। নয়াদিল্লির কয়েক দশকের পুরনো বিদেশনীতি থেকে সরে এসে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদে প্যালেস্টাইনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল ভারত।

পেগাসাস-কাণ্ডে বিরোধীদের মূল প্রশ্ন ছিল, নরেন্দ্র মোদী সরকার কি ইজরায়েল থেকে ফোনে আড়ি পাতার পেগাসাস স্পাইঅয়্যার কিনেছে, না কি কেনেনি? গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার পেগাসাস নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিলেও এ প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ‘জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত’ দিয়েছিলেন কেন্দ্রের কৌঁসুলী, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘আমরা সন্ত্রাসবাদীদের জানতে দিতে পারি না, কোন সফ্‌টঅয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জনসমক্ষে কোনও বিবৃতি দেওয়া যাবে না।’’

যদিও প্রধান বিচারপতি এনভি রমণার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত সেপ্টেম্বেরে সরাসরি কেন্দ্রের যুক্তি খারিজ করে দিয়েছিল। প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের নাগরিকরা বলছেন, তাঁদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি খাড়া করা যাবে না। নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার সুরক্ষিত থাকা উচিত।’’ ইজরায়েলি স্পাইঅয়্যার কেনা এবং তার সাহায্যে বিরোধী নেতাদের উপর নজরদারির অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আরভি রবীন্দ্রনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়ে দেওয়া হয়। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে সেই তদন্ত চলছে।

তথ্যসূত্র ডিজিটাল আনন্দবাজার।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ